অধ্যক্ষের বাণী
অধ্যক্ষ মহোদয়ের বাণী


আ.খ.ম. আবু বকর সিদ্দীক
অধ্যক্ষ
ইসলাম আল্লাহ তাআলার একমাত্র পছন্দনীয় দ্বীন। এ দ্বীন পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব মানুষের। দ্বীন সংরক্ষণ করা দ্বীন প্রতিষ্ঠার একটি মৌলিক ও পূর্বশর্তমূলক কাজ। দ্বীন সংরক্ষণের প্রধান দিক হলো ইলমে দ্বীন তথা কুরআন ও সুন্নাহকে সংরক্ষণ করা।
এ সুমহান লক্ষ্যে যুগে যুগে আল্লাহ তাআলার প্রিয় বান্দারা ইলমে দ্বীনকে হেফাজত করার জন্য পৃথিবীর আনাচে কানাচে অসংখ্য মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। মক্তব, হিফজখানা, আলিয়া, কওমী ও দ্বীনিয়া মাদরাসাসহ সকল দ্বীনি মারকাজ প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য ছিল ইলমে দ্বীনকে সংরক্ষণ করা।
জ্ঞানার্জন ও আমলের মাধ্যমে ইলমে দ্বীন হেফাজতের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত এ সকল মাদরাসার মধ্যে আলিয়া মাদরাসার বর্তমান অবস্থা বড়ই নাজুক। শিক্ষার্থীদের অনেকেই এখন ইলমে দ্বীনের উচ্চতর শিক্ষা (ফাযিল ও কামিল) গ্রহণ থেকে বঞ্চিত। যারাওবা গ্রহণ করছে তাদের অনেকেই আবার শুধু সার্টিফিকেট অর্জনের জন্যে তা করছে। ক্লাসে বসে শিক্ষার্থীরা হাদীসের দরস গ্রহণ করবে বা শিক্ষকরা দরস প্রদান করবেন এটা এখন শুধুই ঐতিহ্য।
হাতেগোনা কিছু কিছু আলিয়া মাদরাসায় এ ধারা জারী থাকলেও তাও প্রায় যায় যায় অবস্থা। এ দূরাবস্থার পিছনে যে সকল কারণ রয়েছে তন্মধ্যে শিক্ষার্থীদের দুনিয়ামুখিতা এবং আরবী ভাষা ও ব্যাকরণে তাদের দূর্বলতা অন্যতম।
তাই আলিয়া মাদরাসার হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে, ইলম ও আমলের সমন্বয়ে শিক্ষার্থীদেরকে যোগ্য আলেম হিসেবে তৈরী করতে একটু ভিন্ন প্রয়াস প্রয়োজন। এ প্রয়াসেরই নাম “দারুন্নাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসা তাখসীসি শাখা”।
এখানে একজন শিক্ষার্থীকে একটি আবাসিক পরিবেশে রেখে স্পেশাল কেয়ারের মাধ্যমে রুটিন মাফিক জীবন যাপন করতে সাহায্য করা হয়। তাকে আমলের প্রতি যত্নবান হতে উৎসাহিত করা হয়। আরবী ভাষা ও ব্যাকরণের প্রতি অধিক গুরুত্বারোপের মাধ্যমে তাকে ইলমের স্বাদ পেতে সাহায্য করা হয়।
ইলমের গভীরতা অর্জনের জন্য এবং বড় বড় কিতাব অধ্যয়নের যোগ্যতা সৃষ্টির জন্য সুপরিকল্পিতভাবে আলিয়া, কওমী ও দ্বীনিয়া মাদরাসার সিলেবাসকে সমন্বয় করে পাঠদান করা হয়। বিভিন্ন শ্রেণিতে পর্যায়ক্রমে উসূলে শাশী, নুরুল আনোয়ার, শরহে বেকায়া, হেদায়া, দুরুসুল বালাগাত, মুখতাসারুল মাআনী, মিরকাত, সুল্লামুল উলুম, শরহে তাহযীব, হেদায়াতুন্নাহু, কাফিয়া, শরহে জামী, ফিকহুস সুনান ওয়াল আসার, মেশকাত, জালালাইন এবং সিহাহ সিত্তাহসহ গুরুত্বপূর্ণ আরবী মূল কিতাব বা-তাহকীক খতম করানো হয়।
সাথে সাথে উর্দূ ও ফার্সী ভাষার সাথে পরিচয় করানো জন্য এ ভাষার প্রাথমিক কিতাবগুলোকে যত্নের সাথে পড়ানো হয়। বিশেষ করে স্পোকেন ও গ্রামারটিক্যাল ইংলিশ যত্নের সাথে শেখানো হয়।
একজন মাদরাসার শিক্ষার্থী যাতে সত্যিকারার্থে ইলমে দ্বীনের ধারক ও বাহক হতে পারে সে জন্যে ফরজের পাশাপাশি দৈনন্দিন নফল সালাত, কুরআন তেলাওয়াত, দরুদ ও জিকিরের অজীফা ইত্যাদি চর্চা করানো হয়। সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের সুস্থ বিনোদনের জন্য ইসলামিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিক্ষাসফর ইত্যাদির আয়োজন করা হয়। তাদের মেধা বিকাশের জন্য সাপ্তাহিক আলোচনা সভা, বিতর্ক প্রতিযোগিতাসহ নানা বিষয়ে কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
বিশেষ করে, নানা কারণে হাফেজ ছাত্রদের সেশন লস হওয়ায় ৪র্থ থেকে ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত চার বছরের সিলেবাসকে সমন্বয় করে, নিজস্ব কিছু বইয়ের মাধ্যমে তাদেরকে মাত্র এক বছর/ ছয় মাসে অষ্টম শ্রেণির উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য প্রাক-তাখসীসি জামাত খোলা হয়েছে।
আশা করি, তাখসীসি শাখার উদ্দেশ্য অর্জনে আমাদের সুপরিকল্পিত পাঠদান সফলকাম হবে। আমরা আলিয়া মাদরাসার হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে পারবো ইনশা আল্লাহ। আল্লাহ তাআলা আমাদের কাজে সহায় হোন। আমীন।
(আ.খ.ম. আবুবকর সিদ্দীক)
অধ্যক্ষ
দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসা